1. [email protected] : Bayezid :
  2. [email protected] : Md Khalilur Rahman : Md Khalilur Rahman
  3. [email protected] : kcg School : kcg School
  4. [email protected] : ICT : ICT

Nothing is impossible

১৯৫৪ সালের আগে পৃথিবীর কেউ বিশ্বাস করতোনা যে মানুষের পক্ষে ৪ মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দৌড়ানো সম্ভব। এর আগের কয়েক দশক ধরে সেসময়ের সেরা দৌড়বিদরা বারবার চেষ্টা করেছে ৪ মিনিটের কম সময়ে এক মাইল (১৬০৯ মিটার) দৌড়ানোর। ৩১শে মে, ১৯১৩ তারিখে ইউএসএ’র জন পল জোনসের ৪ মিনিট ১৪.২ সেকেন্ডের দৌড় ছিলো ফার্স্ট অফিসিয়াল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। ৫৮ টি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ব্রেকার এবং অলিম্পিকে ৯ টি সোনা ও ৩ টি রৌপ্য পদক বিজয়ী “দ্যা ফ্লাইং ফিন” নামে খ্যাত ফিনিশ দৌড়বিদ পাভো নুর্মির ৪ মিনিট ১০.৪ সেকেন্ডের ওয়ার্ল্ড রেকর্ডটি টিকে ছিলো ৮ বছরেরও বেশী। ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবরে ফ্রান্সের দৌড়বিদ জুলস লাদুমেগে ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ডের কম (৯.২ সেকেন্ড) সময় নিয়ে নুর্মির রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার পরই মূলত সারা দুনিয়ায় শোরগোল পড়ে যায় যে ৪ মিনিটেরও কম সময়ে এক মাইল দৌড়ানো সম্ভব কিনা। এর পরের সময়গুলোতে দৌড়বিদরা অনেক চেষ্টার পরও ৪ মিনিটের কম টাইমিং করতে পারেননি কোনোভাবেই। ১৯৪৫ সালের ১৭ই জুলাইয়ে সুইডেনের দৌড়বিদ গুন্ডার হাগ এর করা ৪ মিনিট ১.৪ সেকেন্ডের টাইমিং ই ছিলো সর্বনিম্ন। ৪ মিনিটে এসে বারবার আটকে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকজন সায়েন্টিস্টও মতামত দিয়ে দিলো যে মানুষের যে দৈহিক গড়ন, তাতে এরচেয়ে দ্রুত দৌড়ানো মানুষের পক্ষে সম্ভব না।

ফোর মিনিট ইজ দ্যা ব্যারিয়ার!!!

বিষয়টি মানতে পারলেন না শুধু একজন– অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে নিউরোলজিতে মেজর নিয়ে ডাক্তারি পড়া রজার গিলবার্ট ব্যানিস্টার নামে টগবগে এক বৃটিশ তরুণ। তিনিও মিড রেঞ্জের দৌড়বিদ ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ৪ মিনিট টাইমিং এর এই ব্যারিয়ার শুধুমাত্র সাইকোলজিক্যাল। সারা দুনিয়ার সব মানুষ মনে একটা বদ্ধমূল বিশ্বাস নিয়ে বসে আছে যে ৪ মিনিটের নীচে এক মাইল দৌড়ানো সম্ভব না; এজন্যই মানুষের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে গেছে এটা। ৪ মিনিটের খুব কাছাকাছি টাইমিং করলেও কেউই ৪ মিনিটের নীচে নামতে পারছিলো না শুধুমাত্র ওই বিশ্বাসের কারণেই! তার উপরে ৪ মিনিট হলো একটি রাউন্ড ফিগার। এজন্যই এই ব্যারিয়ার সাইকোলজিক্যাল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।

এর মধ্যেই ১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিকে ১৫০০ মিটার দৌড়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে অংশ নিয়ে ব্যানিস্টার ৪র্থ হন। নতুন বৃটিশ রেকর্ড গড়েন। ডাক্তারিই ছিলো উনার মূল পেশা। অন্যান্য প্রতিযোগীদের তুলনায় তেমন কোনো ট্রেনিং না করেই এমন পারফরম্যান্সের পরও হতাশ হয়ে চিন্তা করলেন দৌড়ানো ছেড়ে দেবেন কিনা। মাসদুয়েক দোদুল্যমান থাকার পর নতুন টার্গেট সেট করলেনঃ

তিনি নিজেই ভাঙবেন এই “ফোর মিনিট ব্যারিয়ার”!!!

হেলসিংকি অলিম্পিকে খুব সামান্য ট্রেনিং নিয়ে ওই পারফরম্যান্স এর কথা মনে করে তিনি আরও বেশী করে বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে তার পক্ষে ৪ মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দৌড়ানো সম্ভব।

দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে আবার নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করলেন তিনি। প্রায় বছরখানেক ধরে কঠোর ট্রেনিংয়ের পর প্রথমে টার্গেট করলেন তৎকালীন বৃটিশ রেকর্ড। ১৯৫৩ সালের ২রা মে তারিখে অক্সফোর্ডের সেই দৌড়ে ৪ মিনিট ৩.৬ সেকেন্ড টাইমিং করে ভেঙে দিলেন ৮ বছরের পুরাতন বৃটিশ রেকর্ড। এরপরের কয়েকবারের চেষ্টায় ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের খুব কাছে যেতে পারলেও সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারছিলেন না। ইতোমধ্যে অন্যরাও বসে ছিলেন না। আমেরিকার অ্যাথলেট ওয়েস স্যান্টি আর অস্ট্রেলিয়ার জন ল্যান্ডিও ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের খুব কাছাকাছি টাইমিং করলেন পরপর কয়েকটি দৌড়ে।

৬ মে, ১৯৫৪। তৎকালীন বৃটিশ অ্যামেচার অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটা অ্যাথলেটিক মিট-আপে রজার ব্যানিস্টার আবার ট্রাই করবেন ৪ মিনিটের কম সময়ে Mile Run শেষ করার। সেদিনই রচিত হলো ইতিহাস! অক্সফোর্ডের ইফলি রোড ট্র‍্যাকে রজার ব্যানিস্টার ১ মাইল দৌড় শেষ করলেন ৩ মিনিট ৫৯.৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে! প্রথমবারের মতো পৃথিবীর বুকে কোনো মানুষ ৪ মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দৌড়ালেন। ভেঙে গেলো যুগের পর যুগ টিকে বদ্ধমূল হয়ে থাকা মেন্টাল ব্যারিয়ার!

এরপরের সময়টাতে যেন সারা দুনিয়ায় যেন ৪ মিনিটের নীচে এক মাইল দৌড়ানোর হিড়িক লেগে গেলো। মাত্র ৪৬ দিনের মাথায় জন ল্যান্ডি ৩ মিনিট ৫৭.৯ সেকেন্ড টাইম নিয়ে ভেঙে ফেললেন ব্যানিস্টারের রেকর্ড, ঠিক ৫৪ দিন পরেই ভ্যানকুভার কমনওয়েলথ গেমসে ব্যানিস্টার আর ল্যান্ডি একইসাথে ৪ মিনিটের কম টাইমিং করে দৌড় শেষ করলেন! আজকের দিন পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৫৪১২ জন অ্যাথলেট ৪ মিনিটের কম সময়ে এক মাইল দৌড় শেষ করেছেন। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসের ৭ তারিখে রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মরোক্কোর হিশাম এল গরুজ করেন ৩ মিনিট ৪৩.১৩ সেকেন্ডের টাইমিং, যেটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হিসেবে এখনও টিকে আছে ২৪ বছর ধরে!

স্যার রজার ব্যানিস্টারের সেই দৌড়টা শুধুই একটি দৌড় ছিলো না। মডার্ন সাইকোলজিতে এটিকে ধরা হয় মানুষের সক্ষমতা পরিমাপের একটি মাইলস্টোন হিসেবে। শুধুমাত্র বিশ্বাসের ব্যারিয়ারে আটকে থাকার কারণে সক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও মানুষ যে অনেক কিছু করতে পারেনা সেটিই আবার সামনে চলে আসে এই ঐতিহাসিক দৌড়ের পর। একইভাবে, ১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিকে আমেরিকান স্প্রিন্টার জিম হাইনস এর ৯.৯৫ সেকেন্ডের দৌড়ের আগ পর্যন্ত ১০ সেকেন্ডই ছিলো ১০০ মিটার স্প্রিন্টের মেন্টাল ব্যারিয়ার!

একটা বাচ্চা হাতিকে যখন পোষ মানানোর প্রসেসে রাখা হয় তখন তার পায়ে জাস্ট এমন একটা দড়ি দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়, যেটা টেনে ছেঁড়ার মতো শক্তি ওই বাচ্চা হাতিটার থাকেনা। ধীরে ধীরে ওই বাচ্চা হাতিটার মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়, “এই দড়ি টেনে ছেঁড়ার মতো শক্তি আমার নেই!” বাচ্চা হাতিটা বয়সের সাথে ধীরে ধীরে বৃহদাকার ধারণ করে শক্তিশালী হলেও তাকে ওই একই সাইজের দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়; যেটা এক ঝটকায় ছিঁড়ে ফেলা কোনো ব্যাপারই না ওই হাতিটার পক্ষে। কিন্তু, “আমি তো ওই দড়িটা ছেঁড়ার মতো শক্তিশালী না!”…শুধুমাত্র এই বিশ্বাসের কারণে ওই সামান্য দড়িতেই আটকে থাকে সে! শুধুমাত্র একারণেই আগেরদিনে সার্কাসের ক্যাম্পে আগুন লাগলে সবচেয়ে বেশী মারা যেতো হাতির দল। হাতিগুলো পায়ে দড়ি বাঁধা অবস্থায় লেলিহান আগুনের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুড়তো এই বিশ্বাস নিয়ে, “এই দড়ি ছেঁড়ার ক্ষমতা আমার নেই!”

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ ইংলিশ প্যারাডাইস                                                                                                                                   কারিগরি সহায়তায়: Amar School by Amar Uddog Limited